শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:৪৪ অপরাহ্ন

সুদের টাকার জন্য লাশ দাফনে বাধা!

সুদের টাকার জন্য লাশ দাফনে বাধা!

স্বদেশ ডেস্ক:

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সুদের টাকা আদায় করতে আওয়ামী লীগ নেতার লাশ দাফনে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবশেষে পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে মরহুমের জানাজা শেষে লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের চেঙ্গুটিয়া গ্রামে।

সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদার ও রাজিহার ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস তালুকদারের চাচা রাজিহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি চেঙ্গুটিয়া গ্রামের নূর মোহাম্মদ তালুকদার (৮২) শুক্রবার ভোর রাতে বরিশালে তার এক আত্মীয়ের বাসায় মারা যান।

শনিবার সকালে নূর মোহাম্মদ তালুকদারের লাশ দাফনের জন্য নিজ গ্রাম চেঙ্গুটিয়ায় নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।

মৃতের বড় ছেলে বাবুল তালুকদার অভিযোগে বলেন, তার বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে গৌরনদী উপজেলার নন্দনপট্টি গ্রামের জব্বার বেপারীর ছেলে আলী হোসেন বেপারী ও তার সহযোগী সিরাজ বেপারী তাদের বাড়িতে এসে দাফনে বাধা দিয়ে তার বাবার কাছে পাওনা টাকা পরিশোধ করে লাশ দাফন করতে হুমকী-ধামকী দেন। এসময় বাবুল তার বাবার লাশ দাফনের পরে রাতে অন্য ভাই-বোনদের নিয়ে বিষয়টি সমাধান করবেন বলে লাশ দাফন করতে চাইলে আলী হোসেন তাকে আগে টাকা না দিলে লাশ দাফন করতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সকালে মৃত নুর মোহম্মদের লাশ দাফন করতে পারেননি তার পরিবারের সদস্যরা।

এব্যাপারে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আফজাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সুদের টাকার কারণে লাশ দাফনে বাধা দেয়ার খবর মরহুম নুর মোহম্মদ তালুকদারের ছেলে লিটন তালুকদার তাকে ফোনে জানালে তিনি এসআই জামাল হোসেনকে ওই গ্রামে পাঠিয়েছেন।

বিষয়টি অমানবিক দাবি করে ওসি আরো বলেন, টাকা-পয়সার লেনদেন থাকতেই পারে, তা পরিশোধ বা আদায়েরও অনেক ব্যবস্থাও আছে, তার জন্য লাশ দাফনে বাধা দেয়া একটি বর্বোরোচিত ঘটনা।

এসআই জামাল হোসেন জানান, তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই তাকে রাজিহার ইউপি চেয়ারম্যান ও মরহুমের ভাতিজা ইলিয়াস তালুকদার ফোনে বিষয়টি ম্যানেজ করবেন জানালে তিনি ঘটনাস্থলে না গিয়ে আশপাশে অবস্থান করছিলেন।

রাজিহার ইউপি চেয়ারম্যান ও মরহুমের ভাতিজা ইলিয়াস তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, পাওনাদাররা সকাল থেকেই বাড়ি ও বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাদ আসর মরহুমের রাইচ মিলের চাতালে জানাজার নামাজ শেষে নিজ বাড়ির কবরস্থানে কোনো বাধা ছাড়াই দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দাফন শেষে মরহুমের উত্তরাধিকার হিসেবে ছেলেদের দেনা-পাওনা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। জানাজায় তিনিসহ উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক আবু সালেহ মো: লিটন, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি সাইদুল সরদার, শ্রমিকলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম সরদারসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মরহুমের বড় ছেলে বাবুল তালুকদার আরো বলেন, গৌরনদী উপজেলার নন্দনপট্টি গ্রামের জব্বার বেপারীর ছেলে আলী হোসেন বেপারী, ওই গ্রামের হান্নান ঘরামীর ছেলে শাহীন ঘরামী ও বাঙ্গিলা গ্রামের জব্বারের ছেলে খোকন বেপারীর কাছ থেকে তার বিবাহিত বোন দোলন সাত বছর আগে উল্লে¬খিত তিনজনের কাছ থেকে সর্বমোট ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা স্ট্যাম্প দিয়ে সুদে ধার নেন। কিছু দিন পরে তার বোন বিদেশ চলে যান। বোনের ধার করা টাকা তার বাবা নুর মোহম্মদ পরিশোধ করতে গিয়ে গত পাঁচ বছরে ১০ লাখ টাকা দেন তাদের। তারপরেও ওই তিন সুদি মহাজন মৌখিকভাবে শনিবার তার কাছে বাবার পাওনা হিসেবে ১৩ লাখ টাকা দাবি করলেও উল্লে¬খিত তিন সুদি মহাজন আগেই তার বাবাকে আসামি করে ৩৩ লাখ টাকা দাবি করে পৃথক মামলা দায়ের করে। ওই মামলার একটিতে তার বাবা নূর মোহম্মদ তালুকদার আদালতের রায় পান। তার বাবা নূর মোহম্মদ সুদি মহাজনদের বিরুদ্ধে স্ট্যাম্প উদ্ধারের একটি মামলা করেন, যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877